মামুনুল সাত দিনের রিমান্ডে
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় করা মোবাইল চুরির মামলায় গ্রেফতার হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই মো. সাজেদুল হক আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন।
এ সময় প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু আসামিকে সাত দিন রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন। পরে আসামির পক্ষে জয়নুল আবেদীন মেজবা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। পরে বিচারক মামুনুল হকের কাছে জানতে চান তার কিছু বলার আছে কি না।
তখন মামুনুল হক আদালতে বলেন, ‘স্যার, আমাকে গ্রেফতার করে গতকাল যেখানে রাখা হয়েছিল সেটি থাকার মতো জায়গা নয়। ওই রকম জায়গায় ইবাদত করা যায় না। অন্যান্য রমজানে আমি নিয়মিত কোরআন খতম করি। রিমান্ডে পাঠালে সুষ্ঠু পরিবেশ থাকবে না এবং আমার ইবাদত করা কঠিন হয়ে যাবে। গ্রেফতারের পর আমাকে অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমাকে রিমান্ড দিয়েন না। এ মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’ শুনানি শেষে মামুনুলের ইবাদতে যেন বিঘ্ন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য বিচারক রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, হেফাজতে ইসলামের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক এবং তার ভাইয়ের নির্দেশে অন্য আসামিরা এ মামলার বাদীর একটি স্যামসাং এ ৫০ মডেলের মোবাইল, নগদ ৭ হাজার টাকা, ২০০ ইউএস ডলার, ব্র্যাক ব্যাংকের একটি ডেবিট কার্ডসহ মানিব্যাগ চুরি করে নিয়ে যান। এর আগে গত বছরের ৬ মার্চ রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোহাম্মদপুর সাত গম্বুজ মসজিদে আমল করাকালে মামুনুল হক এবং তার ভাই মাহফুজুল হকের নির্দেশে জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসার ছাত্র ওমর ও ওসমান এ মামলার বাদী জি এম আলমগীর শাহিনসহ অন্যদের আমল করতে বাধা দেন।
তাদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেন এবং মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে আসামি ওমর, ওসমান, শহীদ, মাওলানা আনিস, জহির মসজিদে এসে বাদীসহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের কিল-ঘুষি মারেন। মামুনুল হক এবং তার ভাইয়ের নির্দেশে মাদরাসার আরও প্রায় ৭০-৮০ জন এসে তাদের আবারও মারধর করেন। বাদী জি এম আলমগীর শাহিনের একটি স্যামসাং মোবাইল, ৭ হাজার টাকা, ২০০ ইউএস ডলার, ব্র্যাক ব্যাংকের একটি ডেবিট কার্ডসহ মানিব্যাগ নিয়ে যান আসামি।
প্রাথমিকভাবে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে এ মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই আসামি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে মুসলমান ও মাদরাসাছাত্রদের উসকে দেন। আসামির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, এজাহারনামীয় পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেফতার, অজ্ঞাত আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ ও তাদের শনাক্তপূর্বক চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধারের লক্ষ্যে আসামিকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
মামলাসূত্রে জানা গেছে, আসামিরা বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি মারধর করে গুরুতর আঘাত করেন। এ ছাড়া একটি স্যামসাং এ ৫০ মডেলের মোবাইল, নগদ ৭ হাজার টাকা, ২০০ ইউএস ডলার, ব্র্যাক ব্যাংকের একটি ডেবিট কার্ডসহ মানিব্যাগ চুরি করে নিয়ে যান।
যাওয়ার সময় হুমকি দেন। এ ছাড়া আসামিরা ধর্মীয় কাজে ইচ্ছাকৃতভাবে গোলযোগ সৃষ্টি করেন ও প্ররোচনা দেন। এ ঘটনায় রাজধানীর মোহম্মদপুরের চান মিয়া হাউজিংয়ের ৪১/৪০ নম্বর বাসার বি/১ ফ্ল্যাটের বাসিন্দা জি এম আলমগীর শাহিন বাদী হয়ে ৬ মার্চ মামলা করেন।
৫৫ আলেমের বিবৃতি : হরতাল-নাশকতার অভিযোগে বিচারের নামে যেন নিরপরাধ কাউকে অযথা হয়রানির শিকার না হতে হয় এ বিষয়ে সরকারের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে আহবান জানিয়েছেন ৫৫ আলেম-ওলামা। গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হোক।
রমজানের শুরুতেই দেশের আলেম ও মাদরাসাশিক্ষকদের সরকার গণহারে গ্রেফতার করে রিমান্ডে দিচ্ছে। সরকারের এ আচরণ অত্যন্ত অমানবিক ও দুঃখজনক। গত কয়েক দিনে সারা দেশে নিরীহ আলেম, শিক্ষক ও ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি। বিবৃতিদাতারা হলেন মুফতি নুরে আলম, মাওলানা আবদুল্লাহ আল মামুন, মাওলানা সরওয়ার আলম, মাওলানা দ্বীন মোহাম্মদ, মাওলানা নূরুল আজিম, মাওলানা জোবায়ের আহমদ, মাওলানা রেজাউল করিম, মাওলানা সোলাইমান, মাওলানা মিজানুর রহমান, মাওলানা ফরিদুল হক প্রমুখ।